Voyager 1 মহাবিশ্ব আসলে কতটা বিশাল || Voyager 1 How big is the universe
![]() |
Voyager 1 |
🌌
মানুষের কৌতূহল সবসময়ই সীমাহীন। আকাশের তারাদের দিকে তাকিয়ে আমরা প্রাচীনকাল থেকেই ভেবেছি—ওপারে কী আছে? পৃথিবীর বাইরে জীবন কি সম্ভব? এই কৌতূহল থেকেই শুরু হয়েছিল মহাকাশ অভিযানের গল্প। আর সেই অভিযানের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি নায়ক হলো ভয়েজার ১ (Voyager 1) স্পেসক্র্যাফট, যা আজও অজানার পথে ছুটে চলছে।
ভয়েজার ১-এর যাত্রা
১৯৭৭ সালে নাসা (NASA) ভয়েজার ১ মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করে। মূলত সৌরজগতের বাইরের গ্রহসমূহ—বৃহস্পতি (Jupiter) ও শনি (Saturn)—কে কাছ থেকে পর্যবেক্ষণের জন্যই এটি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু মিশন শেষ হওয়ার পরও ভয়েজার ১ থেমে যায়নি। ঘণ্টায় প্রায় ৬০,০০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে ছুটতে এটি এখন পৃথিবী থেকে প্রায় ২৬ বিলিয়ন কিলোমিটার দূরে পৌঁছে গেছে।
![]() |
Earth and Moon |
সংখ্যাটা বিশাল মনে হলেও, মহাবিশ্বের পরিপ্রেক্ষিতে এ একেবারেই নগণ্য। তুলনা করার জন্য বলা যায়—একটি আলোকবর্ষ প্রায় ৯.৪৬ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার। অর্থাৎ, ৫০ বছর ধরে ছুটে চলেও ভয়েজার ১ এখনও এক আলোকবর্ষ দূরত্বও অতিক্রম করতে পারেনি!
মহাবিশ্বের বিশালতার আভাস
আমরা যখন আলোকবর্ষের মতো পরিমাপ ব্যবহার করি, তখনই মহাবিশ্বের ব্যাপকতা কিছুটা অনুধাবন করা যায়। নিকটতম নক্ষত্র প্রোক্সিমা সেন্টরি (Proxima Centauri) পৃথিবী থেকে প্রায় ৪.২৪ আলোকবর্ষ দূরে। সেই দূরত্ব অতিক্রম করতে ভয়েজার ১-এর মতো গতিময় মহাকাশযানের প্রয়োজন হবে কয়েক হাজার বছর!
![]() |
universe area |
এটি প্রমাণ করে, আমাদের সৌরজগতই যতটা বড় মনে হয়, তার বাইরের মহাকাশ আসলে অকল্পনীয়ভাবে আরও বিশাল। আমরা এখন পর্যন্ত যা জানি, তা সমুদ্রের এক ফোঁটারও সমান নয়।
মানব জ্ঞানের সীমা
ভয়েজার ১ শুধু দূরে গিয়েই থেমে নেই। আজও এটি পৃথিবীতে সংকেত পাঠাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা সেই ডেটা বিশ্লেষণ করে সৌরজগতের সীমানা, আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম এবং মহাকাশের অদৃশ্য রহস্য সম্পর্কে জানতে পারছেন। তবে দূরত্বের সীমাবদ্ধতা আমাদের অসহায়ত্বও প্রকাশ করে। আলো, যা মহাবিশ্বে সবচেয়ে দ্রুতগতির, সেটিও এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছতে কোটি কোটি বছর সময় নেয়।
এর মানে দাঁড়ায়—যখন আমরা দূরবর্তী কোনো গ্যালাক্সি দেখি, তখন সেটি আসলে কোটি বছর আগের অবস্থায় আমাদের চোখে ভেসে ওঠে। আমরা যেন সময়ের জানালায় দাঁড়িয়ে মহাবিশ্বের অতীতের ছবি দেখছি।
অজানার পথে যাত্রা
ভয়েজার ১ মানবসভ্যতার এক অনন্য প্রতীক। এতে সংরক্ষিত আছে “গোল্ডেন রেকর্ড”—একটি সোনালী ডিস্ক যেখানে পৃথিবীর ভাষা, সঙ্গীত, প্রাকৃতিক শব্দ এবং মানবজীবনের ছবি সংরক্ষণ করা হয়েছে। যদি কোনো দিন ভিনগ্রহের প্রাণী এটি খুঁজে পায়, তবে তারা আমাদের সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাবে।
অর্ধ শতাব্দী পেরিয়েও এই মহাকাশযান চলতে থাকছে, তার শক্তি ধীরে ধীরে ক্ষীণ হলেও। হয়তো একদিন এটি পুরোপুরি নিস্তব্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু মানব জ্ঞানের দিগন্ত প্রসারের ইতিহাসে এর অবদান চিরকাল অমলিন থাকবে।
উপসংহার
ভয়েজার ১-এর কাহিনি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আমাদের মহাবিশ্ব সত্যিই সীমাহীন। পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে আমরা যত দূরই যাই না কেন, অজানার বিস্তার আরও হাজারগুণ বড় হয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। তবু এই প্রচেষ্টা, এই অনবরত অনুসন্ধানই প্রমাণ করে মানুষের কৌতূহল অশেষ।
মহাবিশ্ব যতই বিশাল হোক, মানুষের জানার তৃষ্ণা তার চেয়েও বৃহৎ। 🌌
Comments
Post a Comment