The controversy over the destruction of Nalanda Is Bakhtiyar Khalji really responsible


নালন্দা ধ্বংসের বিতর্ক বখতিয়ার খলজি কি আসলেই দায়ী | The controversy over the destruction of Nalanda is whether Bakhtiyar Khalji was really responsible







 বখতিয়ার খলজি নালন্দা ধ্বংস করেনি, বখতিয়ার আসার পর নালন্দাসহ এরকম হাজার-হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনি এমনিই হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছিলো। বখতিয়ার খলজি নালন্দায় পা-ই ফেলেনি তবুও শুধু শুধু নালন্দা অঞ্চলের নাম বদলে বখতিয়ারপুর হয়ে গেছে। 


বখতিয়ার খলজিসহ মুসলিম শাসকেরা খুবই শিক্ষানুরাগী ছিলো কিন্তু কোনো এক রহস্যময় কারণে মুসলমান শাসকদের পরবর্তী ছয়শত বছরের শাসনে এই অঞ্চলে একটা সিঙ্গল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেনি৷ "


বুদ্ধিস্টরা মিয়ানমারে হাজারবছর নিরবিচ্ছিন্ন শাসন করেছে কিন্তু তারাও নালন্দা কিংবা জগদ্দল বিহারের মতো একটা সিঙ্গল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারেনি।  কারণ এইরকম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা বৈরাগ্যবাদী একমুখী আইডিওলোজির অনুসারী বুদ্ধিস্টদের সামর্থ্যের বাইরে ছিলো। তারা মিয়ানমারে লাখো স্তুপ বানিয়েছে কারণ একমাত্র এই কাজটিই তারা জানতো। 


#নালন্দাসহ হাজার-হাজার যতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভারতবর্ষে ছিলো সবই ছিলো হিন্দু শৈব-বৈষ্ণব রাজাদের প্রতিষ্ঠিত বহুত্ববাদী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান । নালন্দা নিয়ে আলোচনায় সুকৌশলে নালন্দার প্রতিষ্ঠাতা বৈষ্ণব হিন্দু সম্রাট কুমারগুপ্তের কথা আড়াল করা হয়। নালন্দায় খননকার্য চালানো আর্কিওলজিস্টদের লিস্ট দেখলে শুধুমাত্র কম্যুনিস্ট, প্যানইসলামিস্ট এবং কলোনিস্ট আইডিওলোগদেরই পাবেন যারা জেনে-বুঝেই এইসব হিন্দু প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বুদ্ধিস্ট বলে ডাহামিথ্যে ন্যারেটিভস তৈরী করেছে।


৬০০ বছরের শাসনে মুসলমানগণ একটা সিঙ্গল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়তে না পারলেও পূর্বের শৈব এবং বৈষ্ণব রাজারা যে শত-শত  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলো সেগুলো মুসলমানগণ আসার একশোবছরের ভিতর সবগুলো হারিয়ে যায়। নিচে শুধুমাত্র বাংলাদেশ ভূখণ্ডের কয়েকটির নাম দিলাম যেগুলোর ধ্বংসস্তূপ এখনো টিকে আছে। 


১) সোমপুর মহাবিহার 

২) ভবদেব বিহার,  কুমিল্লা।  যেটি হিন্দু বৈষ্ণব দেব রাজবংশ  দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। 

৩) জগদ্দল মহাবিহার যেটির সর্বশেষ আচার্য্য শাক্যশ্রীভদ্র ১২০৪ সালে মুসলমানদের হাত থেকে বাঁচতে তিব্বতে পলায়ন করেন। মুসলমানগণ ১২০৭ সালে এটি পরিপূর্ণরূপে ধ্বংস করে।

৪) হলুদ বিহার

৫) মহাস্থানগড় 

৬) বসু বিহার 

৭) সীতাকোট বিহার


৮) সিলেট চন্দ্রপুর বিহার৷  চন্দ্রবংশীয় দ্বিতীয় রাজা শ্রীচন্দ্র আনুমানিক ৯৩০- ৯৭৫ খ্রি. দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা শাসন করেন। তাঁর শাসনকালের পঞ্চম বর্ষে (আনু. ৯৩৫ খ্রি.) তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনটি দানপত্রে ৪০০ পাটক (প্রতি পাটক ৫০ একর হিসেবে প্রায় ২০,০০০ একর) ভূমি মহাদেব, বিষ্ণু এবং বুদ্ধের নামে দান করেছিলেন। ১৯৫৮ সালে বর্তমান মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পশ্চিমভাগ গ্রামে শ্রীচন্দ্রের একটি তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হয়। উল্লেখ্য যে সম্পূর্ণ আবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা চারটি মঠ ছিলো। 


৯) বিক্রমপুর বিহার, মহাজ্ঞানী নাস্তিকপণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর প্রতিষ্ঠিত। 


প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে এই সবগুলো প্রতিষ্ঠানের একটা মিল পাওয়া গেছে সেটি হল এইসবগুলো 1200 থেকে 1300 সালের মধ্যেই ধ্বংস হয়েছে আর ঠিক এই সময়টা হলো ইসলামী শাসনকালের শুরু।


এরমধ্যে বখতিয়ার কর্তৃক ওদন্তপুরী এবং নালন্দার ধ্বংসের বর্ণনা তখনকার মুসলিম এবং বুদ্ধিস্ট দুই তরফেই লিখা হয়েছে। মিনহাজ ই সিরাজ নালন্দার অদূরে থাকা ফ্যাকাল্টি ওদন্তপুরী ধ্বংসে অংশ নেওয়া সৈনিকের নিজ মুখের বর্ণনা শুনে  লিখেছেন।


বখতিয়ার খলজি নালন্দার ছাত্র-শিক্ষকদের কচুকাটা করে চলে যাওয়ার পর আশপাশে বেঁচে যাওয়া গুটিকয় ছাত্র-শিক্ষক মিলে ৯০ বছর বয়স্ক আচার্য রাহুল শ্রীভদ্রের অধীনে আবার সেই ধ্বংসস্তূপে জড়ো হয়ে নতুন করে পাঠদান চালু করার চেষ্টা করেন। এই ছাত্রদের মধ্যে সদ্য তিব্বত থেকে মিথিলা হয়ে আসা ধর্মস্বামীও ছিলেন।


নতুন করে পাঠদানের খবর জানতে পেরে খলজি আবার তার সেনাদল পাঠায় বেঁচে যাওয়া ছাত্র-শিক্ষকদের জবাই করার জন্য।।


ধর্মস্বামী তার রচিত জীবনী গ্রন্থে বলেন-  উপায়ান্তর না দেখে তুরাক্ষস/তুরাস্ক (স্থানীয়রা তুর্কী সেনাদলকে তাই বলতো।) সেনাদল আসার পূর্বেই উনারা নালন্দা চিরতরে ত্যাগ করে তিব্বতের উদ্দেশ্য রওয়ানা দেন। বৃদ্ধ রাহুল শ্রীভদ্র বয়সের ভারে ন্যুব্জ হওয়ায় তার পক্ষে তিব্বত পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব ছিলোনা তাই তিনি তার প্রিয় নালন্দাতেই তুরাক্ষস (তুর্কী) বাহিনীর হাতে আত্মহুতী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।  ধর্মস্বামীও তার গুরু শ্রীভদ্রকে না নিয়ে স্থান ত্যাগ করবেননা বলে জেদ ধরায় শেষতক শ্রীভদ্র তার সাথে যেতে রাজি হোন। 


তিব্বত পৌঁছে ধর্মস্বামী তার জীবনীগ্রন্থ লিখেন যেখানে তুর্কী সেনাদল কর্তৃক নালন্দা, বিক্রমশীলা, অদন্তপুরীসহ অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধ্বংসলীলা লিপিবদ্ধ করেন।

Post a Comment

Previous Next

نموذج الاتصال