পিরামিডের ভিতরে নতুন আবিষ্কার! বিজ্ঞানীরা কী খুঁজে পেলেন |New discovery inside the pyramid! What did scientists find
গিজার মহাপিরামিডকে (Great Pyramid of Giza) ঘিরে কৌতূহল এবং রহস্যের শেষ নেই। প্রায় ৪,৫০০ বছর আগে নির্মিত এই স্থাপত্য আজও মানবসভ্যতার এক অমীমাংসিত ধাঁধাঁ। কীভাবে প্রাচীন মিশরীয়রা এত বড় বড় পাথরের ব্লক কেটে, টেনে, সঠিকভাবে সাজিয়ে এমন নিখুঁত স্থাপত্য গড়ে তুলেছিল – তা আজও বিজ্ঞানীদের কাছে বিস্ময়ের বিষয়। তবে সম্প্রতি নতুন এক গবেষণা আবারো সারা বিশ্বে আলোচনার ঝড় তুলেছে, কারণ বিজ্ঞানীরা পিরামিডের ভেতর এমন এক জায়গা খুঁজে পেয়েছেন, যা আগে কেউ জানতো না।
গোপন চেম্বারের সন্ধান
২০১৭ সালে “স্ক্যানপিরামিডস প্রকল্প” (ScanPyramids Project)-এর আওতায় আন্তর্জাতিক গবেষক দল এক অভিনব প্রযুক্তি ব্যবহার করে গিজার পিরামিড স্ক্যান করেন। এতে দেখা যায়, পিরামিডের ভেতরে আগে অজানা এক বিশাল ফাঁপা জায়গা বা চেম্বার রয়েছে। ধারণা করা হয়, এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ মিটার, যা একটি যাত্রীবাহী বিমানের আকারের সমান। এই রহস্যময় চেম্বারটিকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন “বিগ ভয়েড” (Big Void)।
কী থাকতে পারে ভেতরে?
এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা সরাসরি ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। তবে অনুমান করা হচ্ছে—
1. এটি হয়তো ফারাও খুফুর (Pharaoh Khufu) সমাধি সুরক্ষিত রাখার জন্য বানানো হয়েছিল।
2. হতে পারে এটি ছিল পিরামিড নির্মাণের সময় পাথর টেনে তোলার জন্য ব্যবহৃত কোনো গোপন পথ।
3. আবার কেউ কেউ মনে করেন, এর ভেতরে মূল্যবান ধনসম্পদ বা ধর্মীয় প্রতীক লুকিয়ে থাকতে পারে।
প্রাচীন মিশরীয়রা মৃত্যুর পরের জীবনে বিশ্বাস করত। তাই রাজাদের সমাধি শুধু মৃতদেহ সংরক্ষণের জায়গা ছিল না, বরং তা ছিল আধ্যাত্মিক যাত্রার দরজা। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই গোপন চেম্বার হয়তো সেই বিশ্বাসের সঙ্গেই যুক্ত।
প্রযুক্তি কীভাবে রহস্য উন্মোচন করল?
গবেষকরা “মিউঅন রেডিওগ্রাফি” (Muon Radiography) নামে এক আধুনিক কণাপদার্থবিজ্ঞানের পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এই প্রযুক্তি মহাকাশ থেকে আসা অতি সূক্ষ্ম কণা, যাকে মিউঅন বলা হয়, তার গতিপথ বিশ্লেষণ করে। যদি কোনো জায়গায় ফাঁপা স্থান থাকে, তবে মিউঅন সহজে প্রবেশ করে যায়। এই প্রক্রিয়ায় পিরামিডের ভেতরের গোপন কক্ষগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।
বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
নতুন চেম্বারের আবিষ্কার বিশ্বব্যাপী গবেষক, প্রত্নতত্ত্ববিদ ও সাধারণ মানুষের মাঝে দারুণ উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছে। অনেকে মনে করছেন, এটি হয়তো শতাব্দীর অন্যতম বড় প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার। তবে এখনো ভেতরে কী আছে, তা নিশ্চিতভাবে জানার জন্য আরো গবেষণা প্রয়োজন।
রহস্যের শেষ নেই
গিজার পিরামিড শুধু ইট-পাথরের সমষ্টি নয়; এটি মানব সভ্যতার ইতিহাস, বিজ্ঞান, ধর্ম ও সংস্কৃতির এক জটিল প্রতীক। প্রতিবারই যখন মনে হয় সব রহস্য উন্মোচিত হয়েছে, তখনই নতুন কোনো আবিষ্কার সামনে আসে। হয়তো ভবিষ্যতে আমরা একদিন জানতে পারব এই গোপন চেম্বারে আসলে কী লুকিয়ে আছে।
উপসংহার
গিজার পিরামিড আজও প্রমাণ করে, প্রাচীন মিশরীয়রা কতটা উন্নত ছিল তাদের স্থাপত্যকলা ও প্রকৌশল জ্ঞানে। নতুন আবিষ্কার শুধু রহস্যই বাড়ায়নি, বরং আমাদের কৌতূহলকে আরও গভীর করেছে। হয়তো এই রহস্যময় চেম্বার একদিন খুলে দেবে ইতিহাসের নতুন অধ্যায়।

